দান সাদাকাহ হচ্ছে উত্তম নেক আমল
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নিকট অত্যন্ত প্রিয় একটি আমল হলো, ধনী ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায় এবং মানবতার কল্যাণে ব্যয় করা।
যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন করে এবং সাধ্য মত দান সাদাকাহ করে তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
অর্থাৎ-“যারা রাতে-দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের
মাল-সম্পদ খরচ করে, তাদের জন্য তাদের
প্রতিপালকের নিকট বদলা রয়েছে, তাদের কোন
ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” (সূরা বাকারাহ-২৭৪)
আল্লাহ্ তায়ালা তার বান্দাদের মধ্যে কাউকে অধিক সম্পদ দান করেছেন আবার কাউকে নিঃস্ব করেছেন। এটি বান্দাকে পরীক্ষা করার আল্লাহর একটি কৌশল। দরিদ্র ব্যক্তির নিকট আল্লাহর চাওয়া হলো, সে ধৈর্য্য ধারণ করবে এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে। এটা করতে পারলে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। আর সম্পদশালী ব্যক্তির নিকট আল্লাহর চাওয়া হলো, সে তার সম্পদ থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করবে। আর এটাতেই তার জন্য সফলতা রয়েছে।
ফরজ ইবাদতের পরে সবচেয়ে উত্তম নেক আমল হলো দান সাদাকাহ। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন,
ذُكِرَ لِيْ: أَنَّ الْأَعْمَالَ تَبَاهَى، فَتَقُوْلُ الصَّدَقَةُ: أَنَا أَفْضَلُكُمْ
“আমাকে বলা হয়েছে যে, আমলগুলো পরস্পর গর্ব করবে। তখন সদকা বলবে, আমি তোমাদের সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ”। (বায়হাকী-শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৩০৫৭)।
দান সাদাকার গুরুত্ব এতো বেশি যে, কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যেন দান সাদকাহ করলে সে যেন আল্লাহকে ঋণ দিলো। ইরশাদ হচ্ছে-
مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ وَٱللَّهُ يَقۡبِضُ وَيَبۡصُۜطُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ
অর্থাৎ- “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দিবে তথা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা বহু বহু গুণে বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলাই কাউকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল করেন এবং তাঁর দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত হতে হবে”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৪৫)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দান সাদকাহকে এমন এক লাভজনক ব্যবসার সাথে তুলনা করেছেন যেখানে কোন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। দেখুন- (সূরা ফাত্বির, আয়াত: ২৯-৩০)
অতএব মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার মালিককে ঋণ দেয় এবং তার কাছে থেকে বুঝে নেয় বহুগুণ বেশি প্রতিদান।
দান সাদকার একটি বড় প্রতিদান হলো কেয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর ব্যক্তি আরশের ছায়ার নীচে থাকবে, তাদের মধ্যে একটি শ্রেণী হবে সেই ব্যক্তি যে নিজে দানখয়রাত এমন গোপনভাবে দেয় যে তার বাম হাত ডান হাতের দানের খবর রাখে না।
দান সাদকার চুড়ান্ত প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ – ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ
অর্থাৎ- “তোমরা নিজ প্রভুর ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতি দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রসারতা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সদৃশ। যা তৈরি করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য। যারা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছলাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন”। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)
অতএব আমরা অধিক পরিমাণে দান সাদকাহ করার চেষ্টা করবো। সামনে আসছে রমজান মাস। এই মাসে দান সাদকার ফজিলত অনেক গুণে বেড়ে যায়। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান সাদকাহ করতেন। আমরাও যেনো এই ব্যপারে সচেষ্ট হই।
✨আন নূর সাদাকা ফাউন্ডেশন✨
❤️